নেত্রকোণা হাওর অধ্যুষিত জেলার বোরো ফসল রক্ষার ডুবন্ত বাধঁ নির্মাণে নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও থেমে নেই দুর্নীতি। চলছে বাধঁ নির্মাণ কাজে হরিলুট ৭০,পার্সেন্ট কাজ শেষ হয়েছে দাবী করছেন কৃষকগণ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাওরে আগাম বন্যার কবল থেকে ৪১ হাজার হেক্টর বোরো ফসল রক্ষা বাধেঁর জন্য ১১৯টি স্কিমের ১৪৭ কিলোমিটার ডুবন্ত বাধঁ সংস্কার কাজে নানা অনিয়মে কৃষক ও হাওর পারের মানুষের মাঝে তদন্তের দাবি উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাধঁ নির্মাণ প্রজেক্ট শুরুতেই পিআইসিদের নামের তালিকায় অনিয়ম দেখা দিয়েছে।
পিআইসিদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। নেত্রকোণা জেলায় ১৯১ বাধঁ সংস্কার কাজ চলছে। এরমধ্যে খালিয়াজুরী উপজেলায় ১২১টি, মদন উপজেলায় ২৩টি, মোহনগঞ্জ উপজেলায় ২৭টি, কলমাকান্দা উপজেলায় ১৩টি, আটপাড়া উপজেলায় ২টি বাধঁ নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও লুটপাট করা হয়েছে। তালিকায় পিআইসিদের নাম থাকলেও কাজে কর্মে তাদের পাওয়া যায়নি।
অপরিকল্পিত বাধঁ নির্মাণ করা হয়েছে। বাধেঁ মাটির পরিবর্তে বালু দেওয়া হয়েছে। বাঁেধর পাশে লাগানো হয়নি ঘাস। বাধেঁর পরিমাণ মতো কোন একটি কাজও মাটি দিয়ে শেষ করা হয়নি। কাজের হিসেব অনুযায়ী পিআইসিদের অতিরিক্ত টাকা দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ম মোতাবেক হাওরে ফসল রক্ষা বাধঁ নির্মাণে পিআইসি ও প্রকল্প তালিকার শুরুতেই অনিয়ম করা হরেছে। ২৮শে ফেব্রæয়ারির মধ্যে বাধেঁর কাজ শেষ করার কথা ছিল।
আজ ৭ এপ্রিল এখন পর্যন্ত বাধেঁর কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অথচ তারা বলছে হাওরের কাজ শেষে হয়ে গেছে। ফসল রক্ষা বাধঁ নির্মাণ তথ্যের ভিত্তিতে ঠিকাদার ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা এবং পিআইসি গণের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ উঠে এসেছে। মোহনগঞ্জ উপজেলা তেতুলিয়া ইউনিয়নে ডুবন্ত বাধেঁর ব্রীচ ক্লোজিং পিআইসি সভাপতি আব্দুল হক তালুকদার,১নং ডুবন্ত বাধেঁর ব্রীচ ক্লোজিং পিআইসি মোঃ সারোয়ার জাহান,২নং পিআইসি চর হাইজদা উপ-প্রকল্প সভাপতি মোঃ মোকারম হোসেন,জৈনপুর নতুন বাজার হতে নওয়াগাঁও ৩নং বাধঁ পিআইসি ছনু মিয়া।
চর হাইজদা উপ-প্রকল্প ৬ নং পিআইসি মোঃ লিটন মিয়া। খালিয়জুরী লিপসা লঞ্চ ঘাট হতে আসাদপুর গোদারা ঘাট ও মায়ার চরের ডুবন্ত বাধঁ নির্মাণ এ কাজের পিআইসি সভাপতি হৃদয় মিয়া। নেত্রকোণা কলমাকান্দা উপদাখালি উপ-প্রকল্প,পিআইসি সভাপতি মোঃ হাছেন আলী। বারহাট্টা উপজেলার সিংগার বিল উপ প্রকল্প,পিআইসি নং (১) সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন। মোহনগঞ্জ উপজেলা চড়হাইজদা বাধঁ উপ-প্রকল্প ব্রীচ ক্লোজিং সভাপতি আমিনুল হক আগুর। খালিয়াজুরী উপজেলার এফসিডি প্রকল্প পোল্ডার পিএইসি সভাপতি এলাহী মিয়া,পিআইসি নং (১)খালিয়াজুরী চুনাই ফসল রক্ষা বাধঁ পিআইসি নং (২২) সভাপতি পৃথিষ রঞ্জন সরকার,খালিয়াজুরী উপজেলার এফডিসি প্রকল্প পোন্ডার (১) পিআইসি সভাপতি কিরণ সরকার। খালিয়াজুরী পোল্ডার নং (২)১ পিআইসি সভাপতি মোঃ আব্দুল করিম,২ পিআইসি সভাপতি মোঃ ফয়সাল আহম্মেদ,৩ পিআইসি সভাপতি পলিন তালুকদার, পিআইসি সভাপতি আব্দুস সালাম, পিআইসি সভাপতি সাইফুল ইসলাম, পিআইসি সভাপতি মোঃ আক্তার হোসেন,সহ ৭ জন পিআইসি কাজ করছেন।এছাড়া জেলার মদন উপজেলা কাজের অনিয়ম রয়েছে।
বাধেঁর কাজে শত দুর্নীতির তালিকার মধ্যে আংশিক তুলে ধরা হয়েছে। তদন্ত করলে সমস্ত দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। কৃষকদের কাছ থেকে খবর নিয়ে জানা যায়, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস থেকে কেউ সরজমিনে মনিটরিং না করেই অফিসে বসে কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করছেন। অথচ একটি বাধঁ সঠিক ভাবে নির্মাণ করা হয়নি। দেখা গেছে পিআইসি সভাপতিগণ ১৫ দিন আগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। হাওর ডুবে গেলে দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের মাঝে দুর্যোগ নেমে আসবে।খাদ্যের হাহাখার দেখা দিবে। হাওরের হাজার কোটি টাকার ফসলহানির ঘটনা ঘটবে। ধনু নদীতে জুয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে যে কোনো সময় হাওরে পানি উটে আসার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। বাকি কাজ দ্রæত শেষ করতে না পারলে হাওরে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। বাধেঁর কাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে গত ৯-৩-২০২৫ ই্ং তারিখে জেলা গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি প্রধান করা হয়েছে।
এছাড়া দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে নেত্রকোণা জেলা হাওর বাচাঁও আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে গত ১-৩-২০২৫ ইং তারিখে নেত্রকোণা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে এক মানববন্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর পরেও বাধেঁর কাজে দুর্নীতি থেমে নেই। এই নিয়ে কোন অফিস তদন্ত করছে খবর পাওয়া জায়নি। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ধনু নদীতে জুয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কোনো সময় হাওড়ে পানি আসার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। বাকি কাজ দ্রæত শেষ করতে না পারলে হাওরে ঘটতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এই নিয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও জেলা গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। বাধঁ নির্মাণ কাজে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)এর মাধ্যমে তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এটাই হাওরবাসীর দাবি। কৃষকের কাঙ্খিত স্বপ্নের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলে দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসবে। এই নিয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকোশলী ও জেলা পিআইসি কমিটির সদস্য সচিব সারওয়ার জাহান বলেন ৭ তারিখ মোহনগঞ্জ উপজেলায় সরজমিনে গিয়ে পিআইসি প্রকল্প পরিদর্শন করবেন ও সকল পিআইসি প্রকল্প দেখার জন্য কমিটি করে বলা হয়েছে তিনি আরও বলেন কাজ না করে কেউ এক টাকা নিতে পারবেনা।
Leave a Reply