বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১২ অপরাহ্ন

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেতশিল্প, ভালো নেই, শিল্প বিকাশের কারিগররা

অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০২৩
  • ৮০ পঠিত

বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে রেখেছে নেত্রকোনা জেলার ১০টি উপজেলার গুটি কয়েক পরিবারের কিছু মানুষ। এই বাঁশ আর বেতই বর্তমানে তাদের জীবিকার প্রধান বাহক।কিন্তু দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পন্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। জীবন জীবিকার তাগিদে তবুও বাপ-দাদার এই পেশাকে এখনও ধরে রেখেছে এই জেলার মাত্র কিছু সংখ্যক পরিবার।

নেত্রকোনা জেলার ১০টি উপজেলা থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও ঐতিহ্যবাহী বেঁতশিল্প। বাঁশ ও বেঁতের তৈরি পণ্যের কদর আর তেমন নেই বললেই চলে। তাই এই জেলার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থলি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেঁত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যাবহার করলেও, এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে এই প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি।

এক সময় নেত্রকোনা জেলার প্রতিটি বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র। এখন সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে চিরচেনা সেই চিত্র। এরপরেও জেলার মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলার গুটি কয়েক পরিবারের মানুষ ঐতিহ্য ধরে রাখাসহ জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাঁশ আর বেঁত শিল্পকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

বর্তমানে সল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায়,কদর বেড়ে যাওয়ায়,কুটির শিল্পের চাহিদা এখন আর তেমন নেই। তাছাড়াও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেঁত। এখন আর আগের মতো বাড়ির আশে-পাশে বাঁশ ও বেঁত গাছ রাখছে না কেউ, সেগুলো কেটে বিভিন্ন চাষাবাদসহ দালান তৈরি করছে মানুষ,তাই কাঁচামাল আর আগের মতো সহজেই পাওয়া যায় না।

বাজারগুলো দখল করেছে প্লাাস্টিক, এলুম্যানিয়াম, স্টিলসহ বিভিন্ন দ্রব্য। যেখানে সেখানে দেখা মিলে না আর বাঁশ ও বেত ঝাঁড়। তাছাড়াও প্লাাস্টিক ও অন্যান্য দ্রব্যের পণ্য টেকসই ও স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখ এখন সেগুলোর ওপর।

জানা যায়, এক সময় দেশের বিস্তীর্ণ জনপদে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি হতো গৃহস্থালী ও সৌখিন পণ্যসামগ্রী। বাড়ির পাশের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ-বেত কেটে গৃহিণীরা তৈরি করতেন হরেক রকমের পণ্য। এসব নিজেদের ব্যাবহারের পাশাপাশি, বাজারে বিক্রি করে চলতো তাদের জীবন-যাপন। তবে এখনও গ্রামীণ উৎসব ও মেলা গুলোতে বাঁশ ও বেতের তৈরি খোল, চাটাই, খোলুই, ধামা, টোনা, পালল্টা, মোড়া, দোলনা, বুক সেল্ফ কদাচিৎ চোখে পড়ে।

বর্তমানে যেখানে তালপাতার হাত পাখারই কদর নেই, সেখানে এসব পণ্য পাওয়া এখন ভাগ্যের ব্যাপার, যতই দিন যাচ্ছে ততই কমে যাচ্ছে এই হস্তশিল্পের চাহিদা। মূল্যবৃদ্ধি, বাঁশ-বেতের দুষ্প্রাপ্যতা আর অন্যদিকে প্লাস্টিক, সিলভার ও মেলামাইন জাতীয় হালকা টেকসই সামগ্রী নাগরিক জীবনে গ্রামীণ হস্তশিল্পের পণ্যকে হটিয়ে দিয়েছে।

পৌর বাজারে বাঁশ-বেত শিল্প বিক্রি করতে আসা খগেন্দ্র চন্দ্র রায় ও কুতুয়া মুর্মু বলেন, বেতশিল্পের দুর্দিনে হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পরিবার বেতশিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছেন। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও পূর্বপুরুষের হাতেখড়ি এই পেশাকে কিছুতেই ছাড়তে পারেননি তারা।

প্রতিদিন তাদের তৈরি কিছু পণ্য পৌর বাজারসহ গ্রাম-গঞ্জে নিয়ে ফেরি করলে, কিছু সৌখিন মানুষ আছে তাদের পণ্য কিনেন। বেলা শেষে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে তরি-তরকারি কিনে বাড়ি ফেরেন তারা। এভাবেই তাদের জীবন-জীবিকা চলে। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমুলের দাম বেশি হওয়ায়, স্বল্প আয়ের এ পেশায় টিকে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 Daily Netrakona News