নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা একটি উপজেলা নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-৫ আসনের সর্বত্রই আগামী (২৩ ডিসেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত পলস্নীর হাট-বাজারের চায়ের দোকানেও সংসদ নির্বাচন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের নিয়ে জমজমাট আলোচনা শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি, কে পাচ্ছেন ধানের শীষ- এ নিয়ে আলোচনার কমতি নেই। উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়কে শোভা পাচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের ছবিসংবলিত তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনসহ অসংখ্য বিলবোর্ড। আগাম প্রচার-প্রচারণার মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিনজন, বিএনপির দুইজন এবং জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী (২৩ ডিসেম্বর) আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেত্রকোনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা হলেন- পূর্বধলা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেন, পূর্বধলা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন, ইঞ্জিনিয়ার মিজবাহুজ্জামান চন্দন, রাবেয়া আলী, ইঞ্জিনিয়ার তুহিন আহমেদ খান, সাবেক জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভিপি আবু তাহের তালুকদার, পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী বাবুল আলম তালুকদার, শহীদুল্লাহ ইমরান,এম আর মাসুম, আব্দুল ওয়াহাব হামিদী। এ আসনে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন চাওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীক এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেন এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুজনের সমর্থনে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা বিভক্ত। জাতীয় শোক দিবস, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় পৃথকভাবে পালিত হয়ে আসছে।
এ আসনে বিগত নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীক এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি উপজেলাকে শতভাগ বিদু্যতায়নসহ বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নের নজির স্থাপন করেছেন। বিগত ১৩ বছরে পূর্বধলায় অসংখ্য পাকা রাস্তা, ব্রিজ,কালভার্ট নির্মাণসহ শিক্ষার প্রসারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড করার লক্ষ্যে তিনি এলাকায় দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন।
এই আসনে বিগত তিনটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে বতর্মান এমপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেন। বিগত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও তিনি এলাকায় ঘন ঘন যাতায়াত অব্যাহত রেখেছেন। ইউপি নির্বাচন থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ নির্বাচন ও নেত্রকোনার কয়েকটি উপজেলায় আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেন বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে দলের নেতা এবং কর্মীদের সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেনের অনুসারীরা উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কে আহমেদ হোসেনকে নৌকার মাঝি হিসেবে দেখতে চাই উলেস্নখ করে তোরণ নির্মাণ করেছেন।
আ’লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যার্শী জাহিদুল ইসলাম সুজন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। তিনি টানা দুইবার উপজেলাবাসীর বিপুল ভোট পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত উপজেলা নির্বাচনে জাহিদুল ইসলাম সুজন আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পেলে স্থানীয় আ’লীগের একটি অংশ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিশাল ভোটে জয়লাভ করার পর থেকেই সুজনকে নিয়ে তার কর্মী-সমর্থকরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। নেত্রকোনা-৫ আসনটিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা একই থাকায় সুজনকে নিয়ে তার কর্মী-সমর্থকরা মাঠে রয়েছেন বলে জানা গেছে। সুজন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সফল সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি যুবলীগেরও সভাপতি ছিলেন। উপজেলা পরিষদের পাশাপাশি সুজন প্রায়শই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে ব্যাপকভাবে সুনাম অর্জন করেছেন।
এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শীদের মধ্যে দু’জন সাবেক ছাত্রনেতা আলোচনায় রয়েছেন। বিগত দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক ভিপি আবু তাহের তালুকদার আ’লীগ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
এ আসনটিতে বিএনপির অপর হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নেত্রকোনা সরকারি কলেজের ছাত্রদলের প্যানেলের সাবেক ভিপি বাবুল আলম তালুকদার। তিনি বিগত সম্মেলনে বিপুল ভোটে উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তার নেতৃত্বে সব বাধা ও বিপত্তি উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা প্রতিটি দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। উপজেলায় বিএনপির নেতৃত্বের কারণে বাবুল আলম তালুকদার একাধিকবার হামলা এবং গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেছেন। প্রতিটি ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্যাতিত এবং ত্যাগী নেতা হিসেবে বাবুল আলম তালুকদারের বিশাল জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এ আসনে জাতীয় পার্টির একক মনোনয়ন প্রত্যার্শী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার আজাদ বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তিনি বিগত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার মনোনয়ন চেয়েছিলেন।এরেই ধারাবাহিকতায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও তিনি জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
Leave a Reply