নেত্রকোনার পূর্বধলায় টানা ভারী বর্ষনে আমন ফসল তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন ফিসারীর মাছ। তাছাড়া ভারী বর্ষনে গাছাপালা উপড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়ে পূর্বধলাবাসী।
জানা গেছে গত কয়েকদিন ধরেই দিনভর হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সারারাত ব্যাপী এক টানা ভারী বর্ষন হয়। এতে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। তলিয়ে যায় আমন ফসল ও মৎস্য খামার। টানা বৃষ্টির কারনে গাছপালা উপড়ে যাওয়ায় বৈদ্যুতিক তার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাছাড়া বৈদ্যুতিক খুটিও হেলে যায়।
এতে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে শুক্ররাত ৯টা পর্যন্ত ২২ঘন্টা পুরো উপজেলায় বিদ্যুত না থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। বিদ্যুতের অভাবে বাসাবাড়ীর লোকজন খাবার পানির সংকটে পড়ে। মোবাইল টাওয়ারগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। অচল হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ চালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি। পানি সংকটের কারনে মসজিদের মুসল্লিরাও বিপাকে পড়ে।
একদিনের বৃষ্টিতে উপজেলার জারিয়া, ধলামুলগাঁও, ঘাগড়া, মেঘশিমুল, খলিশাউড়, বিশকাকুনী, বৈরাটি, বাড়হা, ধোপাডহর এসব এলাকার নিন্মাঞ্চলগুলি প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে আমন ফসল তলিয়ে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষকরা। ফিসারীর পাড় ডুবে যাওয়ায় ভেসে যায় পুকুরের মাছ।
গত শুক্রবার সরে জমিনে দেখা গেছে পূর্বধলা সদর, ঘাগড়া সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ে আছে। ডুবে গেছে আমন ফসল। বৃষ্টির পানিতে লোকজনকে পুকুরের ভেসে যাওয়া মাছ শিকার করতে দেখা গেছে।
উপজেলার মেঘশিমুল গ্রামের কৃষক মোকলেছুর রহমান সরকার, ধলা গ্রামের কৃষক রিয়াদুজ্জামান নাঈম জানায় তাদের এলাকার পুরো বন্ধের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি না কমলে ফসলের ব্যপক ক্ষতি হবে বলে তারা আশংকা করছেন । উপজেলার রৌশনারা রোডের বাসিন্দা মাও: শহিদুল ইসলাম, এমদাদুল ইসলাম জানান বিদ্যুৎ না থাকার কারনে বাসার মর্টারে পানি তোলতে পারেনি তাই খাবার পানি ও গোসলের জন্য বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
পূর্বধলায় সরকারি কলেজের পদার্থ বিষয়ের প্রভাষক জহিরুল ইসলাম জানান. বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রামীনফোনসহ অন্যান্য নেটওয়ার্ক গুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টেলি যোগাযোগে বিড়ম্বনায় পড়েতে হয়েছে উপজেলাবাসীকে। সাংবাদিক মুশতাক আহমেদ খান জানান গত শুক্রবার দিনভর বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক না থাকায় পত্রিকা অফিসে কোন খবর পাঠানো যায়নি।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পূর্বধলা জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী গোলাম মর্তুজা বলেন অব্যাহত বৃষ্টির কারনে কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় রাস্তার গাছ উপরে বিদ্যুতের তারে পড়ায় এবং বৈদ্যুতিক খুটি হেলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে দ্রুত সংযোগ স্বাভাবিক করতে অফিসের লোকজনের মাধ্যমে কাজ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর কবীর জানান বৃষ্টির পানিতে উপজেলার ২হাজার ৩৬০ হেক্টর আমন ফসল তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমির সব্জি ফসল। তবে সামনে আর বৃষ্টি না হলে পানি সরে গেলে ফসলের ক্ষতি কম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply