বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন

মোহনগঞ্জে ৫ মাস আগে ক্যান্সারে মরে যাওয়া জহুরা প্রতিমাসেই তুলছেন ভিজিডির চাল 

ডেইলি নেত্র নিউজ ডেক্স :
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩
  • ৮৯ পঠিত

মৃত্যুর পরও প্রতিমাসে ভিজিডির চাল তুলছেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের বড়তলী-বাহিয়াহারী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কলুংকা গ্রামের জহুরা বেগম,৫ মাস আগে ক্যান্সারে মারা গেছেন তিনি তবে প্রতিমাসে ভিজিডির ৩০ কেজি চাল তুলছেন জহুরা ঘটনাটি জেনে অবাক হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এলাকাবাসী সূত্র জানা যায় :উপজেলার বড়তলী-বাহিয়াহারী ইউনিয়নের কলুংকা গ্রামের মৃত ইদ্রিছ মিয়ার স্ত্রী জহুরা বেগম চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু তার নামে থাকা ভিজিডি কার্ডের ৩০ কেজি চাল প্রতিমাসে তুলছেন অন্যজন। মেম্বার-চেয়ারম্যান এতে জড়িত আছে।

বুধবার ৫ জুলাই কলুংকা গ্রামে গিয়ে জহুরা বেগমের বাড়িতে গেলে তাদের ঝড়াজীর্ণ ঘরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পাশের ঘরের পারভীন আক্তার (৫০) জানান, জহুরার স্বামী ইদ্রিছ মিয়া গত বছর ব্লাড ক্যান্সারে মারা যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জহুরাও মারা যায়। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। কয়েক বছর ধরে ছেলে মেয়েরা ঢাকায় চাকরি করে। তারা বাড়ি আসে না তেমন।

জহুরার ছেলে জহিরুল মিয়া বলেন: মা মারা গেছেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে। আমরা ভাই বোনেরা বাড়িতে থাকি না। চাল কে তুলে বলতে পারব না।

এদিকে বড়তলী-বাহিয়াহারী ইউনিয়নে ভিজিডির চাল নিয়ে নানা অনিয়ম নিয়ে ময়মনসিংহ দুর্নীতি দমন কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন কলুংকা গ্রামের সোমা আক্তার নামে এক নারী। এতে ধনী ও অন্য জেলায় বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েদের নামে ভিজিডির কার্ড বরাদ্দ দিয়ে সেই চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনেছেন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। গত ২৬ জুন তিনি এ অভিযোগ করেন।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বড়তলী-বাহিয়াহারী ইউনিয়নে ভিজিটি কার্ডধারী রয়েছেন ২৫৫ জন। এ কার্ডে মাধ্যমে অতি দরিদ্রদের প্রতি মাসে বিনামূল্যে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। জহুরা বেগমের কার্ডটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতিমাসে তিনি চাল তুলছেন। দপ্তরে থাকা মাস্টার রোলে দেখা গেছে- গত জুন মাসেও নামের পাশে টিপসই দিয়ে চাল তুলেছেন জহুরা বেগম।

এ বিষয়ে জানতে বড়তলী-বানিয়াহারী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল হালিম মহসিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

বড়তলী-বানিয়াহারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহাগ তালুকদার বলেন: জানুয়ারিতে জহুরার নামে ভিজিডির কার্ড করা হয়। পরের মাসেই তিনি মারা যান। বিষয়টি ওই সময় মেম্বার আমাকে অবহিত করেননি। এখন জহুরার নামে কে চাল তুলে নিচ্ছে সেটা মেম্বার বলতে পারবেন। তবে মেম্বার ঢাকায় থাকেন শুনেছি। দুই-তিন মাস ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। ভিজিডি মূলত গরীবদেরই দেওয়া হয়। ধনীদের ভিজিডি দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুমানা রহমান বলেন: ভিজিডির কার্ড মূল হত দরিদ্রদের দেওয়ার নিয়ম। কোন কার্ডধারীর মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি বিষয়টি আমাকে প্রমাণসহ অবহিত করবেন। পরে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে কার্ডটি অন্য একজনের নামে প্রতিস্থাপন করা হবে। জহুরা মারা যাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও মেম্বার কেউই আমাদের জানায়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন: মৃত ব্যক্তির চাল অন্য কেউ তুলে নেওয়া অন্যায়। কেন এমনটা হলো এর জন্য কারা দায়ী এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 Daily Netrakona News