এভাবেই বারহাট্টা উপজেলার প্রধান রাস্তায় অবৈধ গাড়ি পার্কিং করায় জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
জেলার বারহাট্টা উপজেলা জুড়ে চলছে অবৈধ পার্কিং নৈরাজ্য। যার যেমন খুশি যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করছে। উপজেলার ব্যস্ত এলাকার প্রধান সড়ক, থানার মোড়, উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের সামনে, উপজেলা শপিং মলের সামনে গড়ে উঠেছে অবৈধ পার্কিং। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। এতে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল কারি ধর্মপাশা, মোহনগঞ্জ, ও খালিয়াজুরী এবং বারহাট্টা উপজেলার সকল শ্রেণীর পেশার মানুষজন।
জানা যায়: বারহাট্টায় অধিকাংশ ভবনেই নেই কোনো পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। তাই ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা, কিংবা মার্কেটের সামনের রাস্তায় চোখে পড়ে অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের দৃশ্য। ছোট বড় কিছু বিপণিবিতানে পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া সড়কের পাশেই গড়ে ওঠা মার্কেটগুলোতে রাখা হয়নি পার্কিংয়ের সুবিধা। ফলে গাড়ির মালিকের ইচ্ছা ও চালকরা সুবিধার জন্য সড়কই বেছে নেন। ফুটপাত থেকে শুরু করে যেখানে সেখানে রাখা হচ্ছে এসব গাড়ি। যত্রতত্র গাড়ি রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন চালকরা। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। বিশেষ করে অফিস সময়ে অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হতে হয় কর্মজীবীদের।
এদিকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বলছে, প্রতিদিন এই উপজেলার রাস্তায় একাধিক নতুন যানবাহন নামে। যারা সড়কে গাড়ি নামান, তারা অনুমোদন নেয়ার সময় নিজস্ব পার্কিং জোন দেখান। যদিও পরে সেসব স্থানে গাড়ি পার্কিং করা হয় না। ফলে সড়কের ওপর অবৈধভাবে পার্কিং করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেন। গাড়ি রেখে যারা সড়ক দখল করবে বিআরটিএ আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বারহাট্টা উপজেলার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের সামনেই প্রতিদিন এভাবেই যানজট লেগেই থাকে, শুধু এখানেই নয় উপজেলার প্রতিটি রাস্তায় একেই অবস্থা। এবং নেত্রকোনা- মোহনগঞ্জ রোডের প্রধান সড়কে বেসরকারি কোম্পানির বাস, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা কিংবা প্রাইভেট কার পার্ক করে রাখা থাকে দিনরাত। এতে করে প্রধান সড়কটির অধিকাংশই পার্কিং করা গাড়ির দখলে চলে গেছে।
এছাড়া বারহাট্টা থানার সামনের এলাকায় গেলেই দেখা মিলবে অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিয়মিত যাতায়াত করছে। তারা সড়ক দখল করেই যাত্রী উঠা-নামা করাচ্ছেন। সেই সথে এসব অটোরিকশার অধিকাংশ চালক অনভিজ্ঞ। ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। অনেকে ক্ষেত্রে কমবয়সি কিশোর এমনকি শিশুদেরও অটোরিকশার ড্রাইভিং সিটে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাজি মো. নাসির উদ্দীন বলেন: যানজটের কারণে ৫-১০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগছে ঘণ্টার বেশি। আর যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং। রাস্তার পাশে বিশাল মার্কেট নির্মাণ করলেও সেগুলোতে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। আর কিছু মার্কেটে পার্কিংয়ের স্থান রাখা হলেও সেখানে দোকান, শো-রুম, রেস্টুরেন্ট ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
আরেক বাসিন্দা সালাম মোল্লা বলেন: নেত্রকোনা রুট পারমিট ও ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তার মাঝখান থেকে যাত্রী উঠানো নামানো করে। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে বড় ছোট দুর্ঘটনা। নিদির্ষ্ট কোন অটোরিকশা স্ট্যান্ড না থাকায় রাস্তার দুইপাশে এলোমেলো ভাবে গাড়িগুলো দাঁড় করিয়ে রেখে রাস্তাকে আরো সরু করে রাখে তারা।
বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসা হালিমা বেগম বলেন: সকালে বড়ি থেকে আসছি ডাক্তার দেখাতে আবার সাতদিন পর আসতে হবে হাসপাতালে। আমি হার্টের রোগী, রাস্তায় অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। এখন যানজটের কারণে পায়ে হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছি।
শামসুল আলম নামে এক ব্যক্তি বলেন: আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় একটি নেতিবাচক দিক থেকে যাবে, যদি আমরা পার্কিং ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে না পারি বলে। উপজেলায় অটোরিকশা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ২০৩৫ সালে ঢাকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মতো সমান জায়গার প্রয়োজন হবে শুধু অটোরিকশার জন্য। এ জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি অটোরিকশার পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
বারহাট্টা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি খোকন কুমার সাহা জানান: আমরা উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে ও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি, জরুরি ভিত্তিতে এই যানজটের সমাধান করা হবে।
বারহাট্টা উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রার শেখ আব্দুর সামাদ আজাদ বলেন: আমরা এই যানজটের জন্য খুব সমস্যায় জর্জরিত,উপজেলার এই প্রধান সড়কে প্রতিনিয়ত অটোরিকশা পার্কিংয়ের জন্য অনেক সমস্যা হয় সেবা গ্রহীতাদের, সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে আসা জনসাধারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস এটি, অনেক সেবা গ্রহীতা সেবা নিতে এসে যানজটে নাকাল হয়, ট্রাফিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দ্রুত প্রদক্ষেপ জরুরি।
এ ব্যাপারে বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও এসএম মাজহারুল ইসলাম বলেন: সড়কে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে আমাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। বারহাট্টায় নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। আর অবৈধ স্ট্যান্ড যেগুলো রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ করার জন্য আমরা কাজ করছি। আর ব্যাটারি চালিত আটোরিকশার বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়, বারহাট্টায় অটোরিকশার পার্কিং করার মতো কোনো জায়গা না থাকায়, এই সমস্যা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেয় আইন এবং বিধি অনুযায়ী আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো।
Leave a Reply