বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন

নেত্রকোনায় নিজ উদ্যোগে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় শাহেরা আক্তারের মিশ্র সবজি চাষ

অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট : শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩
  • ৮৩ পঠিত

নেত্রকোনা অঞ্চলের সদর থানার পৌরসভা এলাকার পুকুরিয়া গ্রামের কৃষাণী সাহেরা আক্তার। বয়স ৪৫ বছর। পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৫ জন। স্বামী পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বসত ভিটার পরিমাণ একবিঘা। শাহেরা আক্তার বাড়ির পাশে পতিত খালি জায়গায় ৫ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছে। বিগত দিনগুলোতে বিভিন্ন সভা ও উঠান বৈঠকে তিনি অংশগ্রহণ করে তিনি সবজি চাষসহ পরিবেশবান্ধব উপায়ে ফসল উৎপাদন, নারী অধিকার, প্রাণবৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। সাহেরা আক্তার যেহেতু দীর্ঘদিন থেকে পরিবেশবান্ধব উপায়ে চাষবাস করেন, মডেলে এই কৃষাণীকে নির্বাচন করা উচিৎ, এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা উচিত বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা। তিনি মাচায় ও প্লট আকারে ১৪ ধরনের সবজি চাষাবাদ করছেন। সাহেরা আক্তার এ মৌসুমে ১৫ হাজার টাকার সিম ও পুঁই শাক,ডেরস,লাউ, বিক্রি করেছেন ইতিমধ্যে। পাশাপাশি সবজি বাগান থেকে তিনি নিজে খান ও প্রতিবেশীর সাথে বিনিময় করেন। তিনি নিজে বীজ সংরক্ষণ করে রাখেন এবং এসব বীজ প্রতিবেশীর সাথেও বিনিময় করেন।

সাহেরা আক্তার বাড়িতে আম, পেয়ারা, লিচু, বরই, লেবুসহ আরো বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ রয়েছে। তিনি ফলগুলো খাবার পাশাপাশি বিক্রি করে সংসারের জন্য বাড়তি আয় করেন। তিনি বলেন, ‘এ কাজে আমার সন্তানরা সহযোগিতা করে। শাকসবজি ও ফল থেকে যে আয় হয় তা সংসারে অনেক কাজে ব্যয় করা যায়। জৈব উপায়ে উৎপাদনের কারণে আমার সবজিগুলো নিরাপদও।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় শাকসবজি চাষাবাদ করি। পাশাপাশি পাড়া প্রতিবেশীদের উৎসাহিত করি। তাতে তারা সবজি চাষে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।’ তিনি তাদেরকে তার সংরক্ষিত বীজ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন। সাহেদা বেগম চান, গ্রামের প্রতিটি বাড়িই হয়ে উঠুক পুষ্টিবাড়ি।

ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির মতো আশার আলো দেখায় প্রকৃতির সাথে মানুষের মেল বন্ধন। একটি বৃক্ষ বা গাছ কখনও মানুষকে নিরাশ করেনা বরং তাকে যত্ন দাও সে তোমাকে ফলন দেবে। সত্য এবং নির্ভেজাল এ বাক্যগুলো আসলেই আমাদের জীবনে অর্থবহন করে। যদি মাটির সাথে সখ্যতা করে একটি বীজ যত্নবান হয়ে বপন করে সেই মাটিই প্রতিদানে ফলন দিয়ে সফল, মূল্যবান ও হাজারো মানুষের অনুপ্রেরণা করে দেয় যেমনটি করেছে নেত্রকোনা সদর উপজেলার পৌরসভা এলাকার সাহেরা আক্তার। প্রাইমারীর গণ্ডি ফেরিয়ে আর লেখাপড়া করা হয়নি দরিদ্র পরিবারের সন্তান সাহেরা আক্তারের। ভাগ্য উন্নয়নে পাড়ি জমান শাক ও সবজি চাষে।

পারিবারিকভাবে পাওয়া কৃষি বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্পর্ক করেন প্রকৃতির সাথে। কয়েক বছর আগে নিজের অল্প জমির সঙ্গে বর্গা জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। এতে ভালো লাভ হয়। এরপর ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মরিচ, পেঁপে, ঢেড়শসহ নানা শাক-সবজি চাষ করতে থাকেন। এখান থেকে সবজি চাষের নেশায় পড়ে যান। যে মৌসুমে যে সবজি হয়, সেটি চাষ করে থাকেন। বর্তমানে তিনি তার জমিতে তিত করলা, চিচিঙ্গা, টমেটো, কুমড়ো, মরিচ, পাটশাক,ডেরস,কচু সহ আরও বেশ কয়েক ধরনের শাক সবজি চাষ করেছেন। তিনি তার বাড়ির আঙিনায় সম্পূর্ণ জমিতে প্রাকৃতিক উপায়ে ফরমালিনমূক্ত দেশীয় প্রজাতি ও হাইব্রিড জাতের তিত করলা, চিচিঙ্গা, টমেটো চাষ করে সফল কৃষক হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেছেন।

কঠোর পরিশ্রম এবং নিজ প্রচেষ্টায় সাহেরা আক্তার ইতিমধ্যে সফল এবং স্বনির্ভর একজন সবজি চাষি হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেছেন। সারি সারি সবজির বাম্পার ফলন দেখলে যে কারও মন জুড়িয়ে যায়। সাহেরা আক্তারের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার অন্যান্য মা বোনেরা ও এ ধরনের সবজী চাষে ঝুঁকছেন। তাকে এলাকার অনেকেই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে কর্মসংস্থানের পথ প্রদর্শক এবং এ জনপদের জন্য আদর্শ হিসেবে মনে করছেন। সবজি চাষে তিনি শুধু সফল নন, দারিদ্র্যও জয় করেছেন। সবজি চাষের আয় দিয়ে সংসার খরচ চালিয়ে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার স্বপ্ন ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবেন।সাহেরা আক্তার ইতিমধ্যে এলাকার একজন সফল সবজি চাষির খেতাব অর্জন করেছেন।

নেত্রকোনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, তারা জানেন না সাহেরা আক্তার নিজ উদ্যোগে এতো কিছু করেছেন, এবং এই সফল কৃষাণী সাহেরা আক্তার কখনো কৃষি অফিসের পরামর্শ ও নেননি। আমি এই মাত্র শুনেছি, একসময় সবজি ক্ষেত দেখতে যাবো। সবজি চাষে কৃষক পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য সরকারিভাবে কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 Daily Netrakona News