এমন এক বিষয়ের আজ অবতারণা করছি, যা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। এত লেখালেখির পরও বিষয়টি নিয়ে আবারো লিখতে হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে দেশে রাস্তাঘাট এত বেশি ছিল না।
এত উন্নয়নও ছিল না,ছিল না ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ধারণা পুরো দেশে হাইওয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ থেকে ৭ হাজার কিলোমিটার। আঞ্চলিক সড়ক ছিল না বললেই চলে তিন দশকের ব্যবধানে দেশে তাক লাগানো উন্নয়ন হয়েছে, রাস্তাঘাটের পরিমাণ অনেক বেড়েছে সড়কের মাঝখানে ডিভাইডার এসেছে, সড়কের উপর উড়াল সড়ক হয়েছে। ফ্লাইওভার দিয়ে শাঁ শাঁ করে গাড়ি চলে।
ফেরি পারাপার প্রায় নেই বললেই চলে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার উপর সেতু হয়েছে। বর্তমানে দেশে শুধু হাইওয়ের পরিমাণ হচ্ছে ২৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি আঞ্চলিক সড়কের পরিমাণ পৌনে দুই লাখ কিলোমিটার, আমাদের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, রোড মেকানিজমে উন্নয়ন ঘটেছে,
জীবনযাত্রায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন, উন্নয়ন। কিন্তু যেটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেই সচেতনতার খুব বেশি উন্নয়ন ঘটেনি। আর সচেতনতার উন্নতি হয়নি বলেই গত কয়েক বছর ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করতে হচ্ছে। নিরাপদ সড়কের দাবি করা হচ্ছে। এখানে আমার একটু ভিন্নমত রয়েছে। আমি সড়ক-মহাসড়কের দোষ দিই না, দিতে পারি না। সড়ক হচ্ছে একটি জড় পদার্থ। নিজেকে অনিরাপদ করার কোনো শক্তিই তার নেই। রাস্তা কাউকে আপদে ফেলতে পারে না। এই রাস্তার সাথে আপদ যুক্ত করছি আমি, আপনি, আমরা। আমরাই দিনে দিনে সড়ককে অনিরাপদ করে রক্তাক্ত করছি। আমরা প্রত্যেকে যদি সচেতন হই, আইন মানি, নিজেকে সঠিক পথে পরিচালিত করি তাহলে সড়ক কখনো অনিরাপদ হবে না। শুধুমাত্র আইন মেনে চলাচল করলে বহু সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে, ঠেকানো যাবে বহু অঘটন। দেশের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কই নিরাপদ হয়ে উঠবে।
এখানে নতুন একটি আপদের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। গত এক দশক আগেও এই আপদ এত প্রকট ছিল না। এত প্রাণহানির ঘটনাও ঘটত না। সেটি হচ্ছে মোটরসাইকেল। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই বাহনের ব্যবহার পৃথিবীর উন্নত-অনুন্নত সব দেশেই আছে। কিন্তু দুনিয়ার কোথাও এত বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর নজির আছে বলে আমার জানা নেই।
আমাদের দেশে একসময় মোটরসাইকেলের এমন জৌলুস ছিল না। হোন্ডা কিংবা ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের সর্বোচ্চ একশ সিসির মোটরসাইকেল ছিল। রাস্তার পাশ দিয়ে চলাচল করত। মোবিলিটির জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় এই বাহনের বহুমুখী উন্নয়ন ঘটেছে। নানাভাবে চৌকশ করা হয়েছে। বেড়েছে সিসি। ইউরোপ-আমেরিকায় হাইওয়েতে সবচাইতে জনপ্রিয় মোটরসাইকেল হলো হার্লে ডেভিডসন এইগুলো এত শক্তিশালী যে এরা অনায়াসে ২৫০০/৩০০০ সিসির গাড়িকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারে। আর যারা চালায় তারাও বেশ মোটা তাগড়া।
হেলমেট, জ্যাকেট পরে দুর্ঘটনায় নিজেকে সুরক্ষার প্রস্তুতি নিয়েই যাত্রা শুরু করে। প্রায় সময় তারা ৪/৫ জন দলবদ্ধ হয়ে চলে। জ্বালানি খরচ সাশ্রয় এবং নান্দনিকতায় আগেকার যেকোনো সময়ের তুলনায় মোটরসাইকেল বর্তমানে স্বর্ণযুগ পার করছে। কিন্তু এই জনপ্রিয় বাহনটিই রাস্তায় নতুন আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। রং সাইডে চলাচল না করলে যেন মোটরসাইকেলকে মানায় না-এমন একটি ভাব বহু চালকের। অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালকই প্রচণ্ড স্পিডে শাঁ করে গাড়ির বাম পাশ দিয়ে এসে ডানে এমনভাবে বাঁক নেয় যেন তিনি বিশ্বজয় করে এই মাত্র হাজির হয়েছেন। অপরদিকে রং সাইড থেকে হুট করে বের হওয়া মোটরসাইকেলকে রক্ষা করতে স্পিডে থাকা গাড়িগুলোর অবস্থা টালমাটাল হয়ে ওঠে। অনেক চালক কন্ট্রোল করতে পারেন, অনেকেই পারেন না। ঘটে দুর্ঘটনা। সড়ক রক্তাক্ত হয়। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও প্রাণহানির মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। আমি বলছি না এসব দুর্ঘটনার সবগুলোই মোটরসাইকেল চালকের দোষ। তবে সচেতন হলেই রক্তাক্ত এসব দুর্ঘটনা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
দুঃখজনক একটি পরিসংখ্যানের কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই। গত এক বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজারের মতো মানুষ মারা গেছেন। এর মধ্যে ১২শ জনের বেশি বিভিন্ন যানবাহনের চালক। ইদানীং আরেকটা দিক লক্ষ্যণীয়, চালকদের ৯০ ভাগেরই দাড়ি-গোঁফ গজায়নি, অর্থাৎ বয়স ১৮ বছরের নিচে।
লাইসেন্স পাওয়ার বয়সই হয়নি। আরো একটা কথা বলে রাখতে চাই, এখন আর লাইসেন্স লাগে না, টোকেন লাগে। এই ফাঁকে সরকার কত টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়। ভাবা যায়, যে দেশে চালকের সংখ্যা গাড়ি থেকে কম সেই দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় এক বছরে ১২শর বেশি চালক মারা যায়। যেকোনো মৃত্যুই কষ্টের। তবে এই ধরনের সম্পদগুলো যখন হারিয়ে যায় তখন কষ্টটা আরো একটু বেশি লাগে। একজন মানুষ শুধু একজনই নন, তিনি হয়তো কারো বাবা, কারো সন্তান, সর্বোপরি কেউ কেউ একটি পরিবারের একমাত্র অবলম্বন।
একটু সচেতনতার অভাবে সেই মানুষটি যখন মারা যায় তখন আসলে ওই পরিবারে একটি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। যার ওপর দিয়ে যায় শুধু তিনিই বুঝেন কি গেল বা কি হারালেন। অথচ একটু সচেতন হলে, সতর্কতার সাথে গাড়ি চালালে কিংবা আইন মেনে চলাচল করলে এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই ঠেকানো যেত। গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত গতি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। নিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালালে সড়কে সিংহভাগ দুর্ঘটনা কমে যাবে। তাই এখন গাড়ির গতি কমিয়ে জীবন বাঁচাতে হবে। রাস্তায় বেঁধে দেওয়া গাড়ির গতিসীমা মেনে চলতে হবে, সচেতনভাবেই আইন মেনে চলতে হবে।
রাস্তার টেক-বাঁকগুলো আরো একটু সহজ, সরল করা যায়। বিদেশে দেখেছি, সরু রাস্তার বাঁকে বড় বড় আয়না দেওয়া থাকে, যা দেখে চালক দেখতে পারে অন্য দিক থেকে কোনো গাড়ি আসছে কিনা। এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। নেত্রকোনা শহরের রাস্তাগুলো খানাখন্দে ভরপুর। শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ত কয়েকটি সড়ক তো বন্ধই। কোনো গাড়িই চলাচল করতে পারে না। যেগুলোতে গাড়ি চলাচল করে সেগুলোতে এত বেশি খানাখন্দ যে, গুনে শেষ করা যাবে না। শুধুমাত্র নেত্রকোনা শহরের রাস্তায় যে পরিমাণ গর্ত রয়েছে সারা দেশের সড়ক মিলে এতগুলো গর্ত আছে কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে।
শুধু সড়কই নয়, এখন ফুটপাত নিরাপদ করার দাবি জানানোর সময় এসেছে। শহরের ফুটপাতের পাশেই অগুনতি
Leave a Reply