নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় হাত-পা বেঁধে রাখা আট বছরের শিশু তায়িবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন এই উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স শিশুটির বাড়িতে গিয়ে তার খোঁজখবর নেওয়াসহ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
ইউএনও শেখ জাহিদ হাসান বিকেলে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘সোমবার সকালে প্রথম আলোতে, হাত-পা বাঁধা জীবন কাটছে ৮ বছরের তায়িবার, শিরোনামের প্রতিবেদনটি আমার নজরে আসার পর আমি সঙ্গে সঙ্গে শিশুটির বাড়িতে ছুটে যাই।
পরে তার পরিবারসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়। তারা জানান, তায়িবা ছোটকাল থেকেই বিরল রোগে ভুগছে। অদ্ভুত আচরণের কারণে চার–পাঁচ বছর ধরে তাকে হাত-পা বেঁধে রাখতে হয়। পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় শিশুটির চিকিৎসা করাতে পারছে না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়। মঙ্গলবার (আজ) তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাত–পা বাঁধা জীবন কাটছে ৮ বছরের তায়িবার
ছেড়ে দিলে নিজেই মাথা চাপড়ায় ও হাত কামড়ায় তায়িবা দিনমজুর মাহফুজুর রহমান ও আঁখি আক্তার দম্পতির মেয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও শিশুটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ মে একজন ধাত্রীর মাধ্যমে তায়িবার জন্ম হয়। জন্মের কয়েক মাস পর শিশুটির অদ্ভুত আচরণ দেখে পরিবারের লোকজন তাকে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
কিন্তু বছরখানেক পর আবারও একই অবস্থা দেখা দেওয়ায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে চিকিৎসক তাকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু হতদরিদ্র পরিবারটির সামর্থ্য না থাকায় আর ঢাকায় না নিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায়। এর পর থেকে দিন দিন শিশুটির অস্বাভাবিক আচরণ বাড়তে থাকে। তাকে ছেড়ে দিলে নিজেই মাথা চাপড়ায় ও হাত কামড়ায়। যেদিকে খুশি চলে যেতে চায়। অন্যদের মারধর করে, রাতে না ঘুমিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করে। ফলে শিশুটির কখনো দুই হাত একসঙ্গে আবার কখনো দুই হাত দুই দিকে বেঁধে রাখতে হচ্ছে মা–বাবাকে। এমন পরিবেশেই বেড়ে উঠছে সে।
এ নিয়ে সোমবার প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি উপজেলা প্রশাসনের নজরে এলে শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করেন ইউএনও। এ ছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রথম আলোর এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি শিশুটির যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে চান।
আঁখি আক্তার বলেন দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তায়িবা সবার বড়। সে কথা কইতে পারে না। যখন যা মন চায় তাই করে। তারে বাইন্দা রাহন ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। শক্ত কোনো কিছু সামনে পাইলেই নিজের মাথা ঠুকতে থাকে। ঘুমের ওষুধ ছাড়া কোনো সময় সে ঘুমায় না। মেয়েডারে লইয়া অনেক কষ্টে আছি। রাইত দিন হাত বাইন্দা রাখতে হয়। মা হইয়া এই দৃশ্য দেখতে আর বালা লাগে না। এখন চিকিৎসার ব্যবস্থা অওনে খুবই খুশি লাগতাছে। মনে হইতাছে আমার মেয়ে বুধহয় বালা হইয়া যাইবো।
বাবা মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি একজন দিনমজুর। নিজেও অসুস্থ। সংসার চলে না। নিজের ঘর না থাকায় বড় ভাইয়ের এই চালা ঘরটাতে পরিবার নিয়া থাকি। অসুস্থ মেয়েডার চিকিৎসা করাইতে পারতাছিলাম না।
অহন আপনাদের মাধ্যমে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হইতাছে। ইউএনও স্যার ২০ হাজার টেহা দিছে আর কইছে ময়মনসিংহ ডাক্তারের সাথে তাঁর কথা হইছে। একদুই দিনের মধ্যেই ডাক্তারের কাছে নিয়া যাব
Leave a Reply