আমাদেরএ দেশে বিষয়ভিত্তিক গান তৈরির জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের গর্ব নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কৃতি সন্তান গীতিকবি সুজন হাজং। বিশেষ বিশেষ দিন উপলক্ষে গান লিখে নিজস্ব অর্থায়নে সেগুলো পেশাদার সঙ্গীত পরিচালকদের দিয়ে সুর করিয়েছেন এবং করাচ্ছেন। অতঃপর জনপ্রিয় শিল্পীদের কণ্ঠে তুলে দিচ্ছেন নিজের লেখা সেসব গান। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারতের স্বনামধন্য সব কণ্ঠশিল্পীরা সুজন হাজংয়ের লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।বিষয়ভিত্তিক গানে বিশেষ অবদান রাখায় গত বছর ‘আনন্দ লহরী পারফর্মেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২’-এর বিশেষ সন্মাননা পেয়েছেন সুজন হাজং। গত ২৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিতব্য ‘আনন্দ লহরী পারফর্মেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২’-এর অন্যান্য ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্তদের সঙ্গে তিনি এ বিশেষ সন্মাননা গ্রহণ করেন।
সুজন হাজং-এর লেখা বিষয়ভিত্তিক গানের মধ্যে বেশ কিছু তুমুল প্রশংশিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে নচিকেতার কণ্ঠে ‘ভোরের সূর্য’ ও শুভমিতার কণ্ঠে ‘আবার এসো পিতা’, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে অবন্তী সিঁথির কণ্ঠে ‘আমাদের বঙ্গমাতা’, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বেলাল খান ও আতিয়া আনিসার কণ্ঠে ‘আলোকবর্তিকা’ ও কিশোর, লিজা, পুলক, পুতুলের কণ্ঠে ‘জনতার মঞ্চে’, শেখ রাসেলের জন্মদিনে অবন্তী সিঁথির কণ্ঠে ‘ভোরের আকাশ’, জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর’, ফাহমিদা নবীর কণ্ঠে ‘পিতার রক্তে’ ও নিশিতা বড়ুয়ার কণ্ঠে ‘রক্তমাখা সিঁড়ি’ তার মধ্যে অন্যতম।
এ ছাড়া শেখ রাসেলকে নিয়ে সুজন হাজংয়ের কথায় ফাহমিদা নবীর ‘ছোট্ট রাসেল সোনা’, মুহিন খানের ‘রাসেল আমাদের স্বাধীনতা’, সুমন কল্যাণের ‘শেখ রাসেলের ক্রন্দন’, সুস্মিতা সাহার ‘রাসেল আমাদের বাংলাদেশ’ শিরোনামের হৃদয়স্পর্শী গানগুলোও শ্রোতাদের কাছে প্রশংসা পেয়েছে।
বিষয়ভিত্তিক আরো কিছু গান করেছেন সুজন হাজং। মুজিববর্ষ উপলক্ষে কিশোর, লুইপা, সাব্বির ও রন্টি দাশের কণ্ঠে ‘মুজিববর্ষ’, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে অবন্তী সিঁথির কণ্ঠে ‘মুক্তির সংগ্রাম’ শহীদ দিবসে প্রিয়াঙ্কা গোপের কণ্ঠে ‘বাংলা মা’ ও যাদু রিছিলের ‘জেগে ওঠো’, স্বাধীনতা দিবসে ফাহমিদা নবীর ‘বাংলাদেশ’ ও সামিনা চৌধুরীর কণ্ঠে ‘বাংলার আকাশ’, বিজয় দিবসে সুস্মিতা সাহার ‘বিজয়’, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফাহমিদা নবীর ‘মনের মানুষ’ গানগুলো সুজন হাজংয়ের অনন্য সৃষ্টি। পরিবেশ নিয়ে পপ গায়িকা মেহরীনের কণ্ঠে ‘লিভ অন আর্থ’ ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনকে নিয়ে সুমন কল্যাণের কণ্ঠে ‘বাংলার অহমিকা’ শিরোনামের বিষয়ভিত্তিক গান গুলো শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। সুজন হাজংয়ের লেখা আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও সাফল্য নিয়ে সাব্বির ও লিজার কণ্ঠে ‘উন্নয়ন’ শিরোনামের গানটিও বহুল প্রচারিত।
হাজংরা এই উপমহাদেশে টংক, তেভাগা, হাতিখেদা, জমিদার প্রথা উচ্ছেদ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সুজন হাজং এই সংগ্রামী হাজং জনগোষ্ঠী থেকে ওঠে আসা একজন প্রতিভাবান মেধাবী তরুণ গীতিকার।
এর আগে তিনি সাহিত্য ও সংষ্কৃতিতে বিশেষ অবদান রাখায় সাউথ এশিয়ান আইকনিক স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০২১, সলীল চৌধুরী স্মৃতি পদক ২০১৯ (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত), ডায়মন্ড হারবার প্রেস ক্লাব সম্মাননা (কোলকাতা ২০১৮), বাঙালি কৃষ্টি ও সংস্কৃতি পুরস্কার ২০১৯, জাতীয় সাহিত্য পদক ২০১৮, শেখ রাসেল স্মৃতি পাঠাগার পদক ২০১৭, বাউল সাধক কবি রশিদ উদ্দিন পদক ২০১৭, বাউল তরী পদক ২০১৮ ইত্যাদি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি তার মেধা ও যোগ্যতায় জেলার দূর্গাপুর বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্বিক কালচারাল একাডেমীতে দ্বিতীয়বারের জন্য পরিচালকের দায়িত্ব পেলেন, তরুণ কবি-সাহিত্যিক ও গীতিকার, সুজন হাজং। তরুণ প্রজন্মের এই গীতিকার সুজন হাজংকে পুনরায় দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকার। গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব রেহেনা আকতার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। সুজন হাজং একাধারে কবি, গীতিকার, কলামিস্ট, গবেষক ও অনুবাদক। কবিতা ও গান লেখার পাশাপাশি তিনি বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠীর ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করছেন।
সুজন হাজং তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহে পৃথিবীর আদি থেকে বসবারত হাজং, গারো, কোচ, বানাই, হদি, ডালু ও বর্মণ নৃগোষ্ঠীর বসবাস। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। তিনি বলেন, কালের বিবর্তণে পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীর ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা এবং বিকাশে দ্বিতীয় মেয়াদে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি আদিবাসি সন্তান গর্বিতসহ সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ, তিনি আমাকে পুনরায় নিয়োগসহ কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এটা আমার শেকড়। এই মাটি আলো বাতাসে আমি বেড়ে উঠেছি। এখানকার মানুষের জীবনবোধ, জীবনাচার ও জীবন সংগ্রাম আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি।
তাই সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উন্নয়নে কাজ করতে আমি প্রতিশ্রুতিশীল। উল্লেখ্য, গীতিকার সুজন হাজংয়ের জন্ম ১৯৮৫ সালের ১২ অক্টোবর বারোমারী গ্রামে (আজো মানে নানা বাড়ী) নানার বাড়ীতে। সুজন হাজংয়ের মা কোকিলা হাজং দূর্গাপুর সদর ইউনিয়ণের জনপ্রতিনিধি ছিলেন। কোকিলা হাজং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দূর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগে মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দূর্গাপুর আওয়ামী লীগের দু:সময়ের একজন তুখোড় নারী নেত্রী ছিলেন। এই সুনামধন্য গীতিকার সুজন হাজংরা দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনিই বড় বলে। জানিয়েছেন
Leave a Reply