নেত্রকোনায় এক করোন কাহিনী অভাব অনটন অসহায়ত্ব ও দারিদ্র্যের কারণে নুরজাহান খানম (৬৮) বেশি দূর লেখাপড়া করতে পারেননি। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পাঠ চুকাতে হয়েছিল তাঁকে। এরপর তার দরিদ্র বাবা বিয়ে দিয়ে দেন থাকে।তার স্বামীর অবস্থাও তখন ‘দিন এনে দিন খাওয়া’র মতো অভাব অনটনের সংসার।তার লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় তিনি নানা প্রতিকূলতার মধ্যে নিজের চার সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন। সন্তানেরা প্রত্যেকেই এখন নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,যে নূরজাহানের কথা এতোক্ষণ লিখেছি, সেই নুরজাহান খানম নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের সিংহেরগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের ৭১ এর রনআঙ্গের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদের স্ত্রী। নুরজাহান খানমের তিন ছেলে ও এক মেয়ে বড় ছেলে মো. আবুল কালাম আজাদ একজন চিকিৎসক।
তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজে পড়েছেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। মেয়ে নাসরিন রিনা সমাজকর্মে স্নাতকোত্তর করেছেন। মেজ ছেলে মো. হুমায়ুন কবির সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।আর ছোট ছেলে মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করে সরকারি চাকরি করছেন। তিনি বৃত্তি নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করছেন।
নুরজাহান খানম জানান, ১৯৭২ সালে তাঁর যখন বিয়ে হয়, তখন স্বামীর পরিবার সচ্ছল ছিল না। শ্বশুর বাড়িতে ১১ জনের সংসার। বিয়ের তিন বছরের মাথায় তাঁদের প্রথম ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এরপর স্বামী আবদুল হামিদের চাকরি হয় রাঙামাটির বরকল উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এর তিন বছর পর মেয়ের জন্ম এবং দুই বছর পরপর আরও দুই ছেলের জন্ম হয়। বড় এই পরিবারে তাঁর স্বামীর অল্প উপার্জনেই চলে সবকিছু। তেমন আবাদি জমি না থাকায় জীবনের ওপর ভর করে চরম দারিদ্র্য ও হতাশা। অনিশ্চয়তা দেখা দেয় সংসারে টিকে থাকার। কিন্তু সকল অভাব অনটন অসহায়ত্বের কাছে হেরে যাননি তিনি।
নুরজাহান বাড়িতে হাঁস-মুরগি,গরু-ছাগল পালন শুরু করেন। শাকসবজি চাষ করেন। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করান। কিন্তু চার সন্তানের লেখাপড়া চালাতে গিয়ে ভয়ানক অর্থনৈতিক সংকটে কাটে নুরজাহানের দিন। স্বামীর বেতন ও নিজের কিছু আয়ে আর কোনোভাবেই চলে না। তবে হাল ছাড়েননি নুরজাহান। এসএসসিতে মেয়ের ফরম পূরণ করার টাকা না থাকায় তিনি নিজের কানের দুল বিক্রি করে দেন। নুরজাহানের ছোট ছেলে মো. জসিম উদ্দিন শনিবার(১৩ মে) বিকেলে যুক্তরাজ্য থেকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের মা আমাদের কাছে বেহেশত। আমাদের গর্ব, অহংকার। আমরা চার ভাইবোন যা হচ্ছি বা হতে যাচ্ছি, তার সবকিছুই আমাদের মা-বাবার জন্য।
তবে স্কুলশিক্ষক বাবার সামান্য আয়ে মা যেভাবে আমাদের গড়ে তুলেছেন, সেটা ভাবলে এখন অসম্ভব মনে হয়। আমার মা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা ছোট থেকেই আমাদের দেশপ্রেম, সততা ও নৈতিক শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা যেন সৎ জীবন যাপন করতে পারি, সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে পারি। নুরজাহান খানম ও তাঁর স্বামী গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। নুরজাহান জানান, সব সময় চেয়েছেন, সন্তানেরা যেন ঠিকমতো পড়াশোনা করে ভালো মানুষ হন। খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে তাঁদের বড় করেছেন। আবার পড়াশোনায় ঘাটতি যেন না থাকে, সেটা খেয়াল করতেন। সন্তানেরা এখন দেশ ও দশের সেবা করছেন, সেটাই তাঁদের জন্য আনন্দের ও সাফল্যের
Leave a Reply