নেত্রকোনার দুর্গাপুরে পাহাড়ি অঞ্চলের অনুর্বর পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষের নতুন দিগন্ত সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু নেই কোনো উদ্যোগ।নেত্রকোনা জেলার পাহাড়ী এলাকার এই অনুর্বর পতিত জমিতে চা চাষ করলে ব্যাপক লাভবান হতো এই অঞ্চলের চাষিরা। দেশে চা পাতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর ফলে নেত্রকোনায় বিভিন্ন এলাকায় এর উপযোগী জমিতে চা চাষ সহজ ও লাভজনক হওয়া যাবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে এই এলাকার স্হানীয় বাসিন্দারা। এই অঞ্চলে চা চাষ করলে সফল্যের অগ্রযাত্রায় তা আরও বিস্তৃতি পেয়ে এক ধাপ এগিয়ে যেতো। এর ফলে এ সাফল্যটি হতো নেত্রকোনার বিস্তীর্ণ অনুর্বর জমিতে। বাণিজ্যিকভাবে নেত্রকোনায় চা চাষের এই উদ্যোগ নিলে ভালো হতো বলে আশা প্রকাশ করেন চা প্রেমীরা। নেত্রকোনা অঞ্চলের পাহাড়ী এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নেত্রকোনার চা ও প্রকৃতি প্রেমীরা।
নেত্রকোনার চা প্রেমীরা বলেন, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রতি কেজি চা পাতার মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত থাকে। ফলে নেত্রকোনা জেলার পাহাড়ী এলাকায় চা বাগান করলে আর্থিকভাবে লাভবান হতো সরকার। নেত্রকোনা জেলার পাহাড়ী অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষ করা হলে। অনুর্বর জমিতে চা চাষ করে ভালো ফলন পেতো চা চাষিরা। এতে করে বিপুল পরিমাণ অনাবাদী পাহাড়ী পরিত্যক্ত জমিতে ভালো ফলন পেতো চা চাষিরা। চা শিল্পের ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক পুরনো। কিন্তু পুরনো আর আজকের নতুনের মধ্যে অনেক ফারাক। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চা শিল্প আজ স্বাধীন দেশের একটি উন্নয়নশীল শিল্পের খাতায় নাম লিখাতে সক্ষম হয়েছে। অর্থকরী ও ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পখাত এখন সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে উপনীত হয়েছে। চায়ের অভ্যন্তরীণ ও রফতানি বাজার চাহিদাকে ঘিরেই এই উজ্জ্বল সম্ভাবনা রচিত হচ্ছে।
সুদূর অতীতকালে এদেশের মসলিন কাপড় কিংবা নিকট অতীতে পাট-চামড়া শিল্পের মতোই সুপ্রাচীন শিল্প ও বাণিজ্য খাত চা। সগৌরবে এগিয়ে চলেছে সম্ভাবনার হাতছানি দিয়ে। চা শিল্প এখন আর অবহেলিত নয়। প্রচলিত এই রফতানি পণ্যটি তার সুবিশাল বাজার সহসাই ফিরে পেতে পারে। দীর্ঘদিন যাবত চা শিল্প খাতকে উপেক্ষা, অবহেলার কারণে কালের বিবর্তনে হারাতে যাচ্ছিল তার সুখ্যাতি।
এবার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য সময়োপযোগী উদ্যোগ নেয়া আরো প্রয়োজন। যাতে বনেদি চা শিল্প অচিরেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে। বলে রাখা ভাল প্রথম চা বাগান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আঠারো শো আঠাশ সালে। অবিভক্ত ভারতে চট্টগ্রামের কোদালায় তখনই জমি নেয়া হয়।
বর্তমানে যেখানে চট্টগ্রাম ক্লাব ১৮৪০ সালে সেখানেই পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা হয় প্রথম চা গাছ। তবে প্রথম বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয় সিলেটে, আঠারো শো চুয়ান্ন সালে। সে বছর সিলেট শহরের উপকণ্ঠে মালনিছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বাগানে চা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকে ধীরে ধীরে চা এ দেশে একটি কৃষিভিত্তিক শ্রমঘণ শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি আয় বৃদ্ধি, আমদানি বিকল্প দ্রব্য উৎপাদন এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসকরণের মাধ্যমে চা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চা উত্পাদন শুধু সিলেটেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ১৮৬০ সালে হবিগঞ্জের লালচাঁন্দ চা বাগান ও মৌলভীবাজারের মির্তিঙ্গা চা বাগানে চায়ের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়।
২০০০ সালে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়েও ছোট আঙ্গিকে চায়ের চাষ শুরু হয়। ২০০৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামেও শুরু হয় চায়ের চাষ। এরেই ধারাবাহিকতায় এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে নেত্রকোনার পাহাড়ী অঞ্চলে ও ভালো চা চাষ হতো। যেহেতু নেত্রকোনা জেলার সীমানাবর্তী ভারতের জেলাগুলোতে ব্যাপক ভাবে চা চাষ হয়। তাই এই অঞ্চলে চা চাষের জন্য উপযোগী। সম্প্রতি নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষ করা শুরু করলে ভালো হতো।
উক্ত অঞ্চলে চা চাষের জন্য সরকারী উদ্যোগ নিলে উক্ত অঞ্চলের অনেক পাহাড়ী পতিত জমি চাষের আওতায় আনা যাবে। পাশাপাশি বিপুল পরিমান জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান তৈরি করা যাবে। এতে যেমন উৎপাদন বাড়বে পাশাপাশি উক্ত অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে জানান অনেকেই।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুজ্জামান বলেন, নেত্রকোনা জেলার ভৌগোলিক ও ভূমি অবস্থান ভালো। এখানকার মাটি যেমন অন্যান্য ফসলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, তেমনি চায়ের জন্যও উপযোগী। তবে যে জমিগুলো বেশি উর্বর ও অন্যান্য ফসল ভালো ফলে, সেই জমিগুলো বাদ দিয়ে যদি পাহাড়ী ও নদী অববাহিকা যে গুলো জমিতে অন্যান্য ফসল ভালো হয় না, সেই জমিতে চা-চাষ করা হলে ভালো হয়, তাহলে কৃষকরা বেশি লাভবান হবেন। তাছাড়া চা বোর্ড যদি চা-চাষিদের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা, বাজারজাতকরণসহ অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করে, তাহলে নেত্রকোনা জেলায় চা হবে গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল।
নেত্রকোনা জেলায় চা শিল্পের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল বলে জানান জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি বলেন, নেত্রকোনা জেলায় চা বোর্ড অফিস স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসক হিসেবে আমি একটি আবেদনপত্র জমা দিবো। তবে কেউ যদি ব্যক্তি মালিকানায় চা ফ্যাক্টরি করতে চায় তাহলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
Leave a Reply