আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোণার পাঁচটি সংসদীয় আসনের সবগুলোতেই নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্রভাবে লড়তে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
নৌকার মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বি তার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নেত্রকোণা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) ও নেত্রকোণা-৫ (পূর্বধলা) আসনে এবার প্রার্থী বদল করেছে আওয়ামী লীগ।
বাকি তিন আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যরা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন: আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া নেতারা। এ ছাড়া জাকের পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও জাতীয় পার্টির নেতাও মনোনয়নপত্র কিনছেন।
নেত্রকোণা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন: এখন পর্যন্ত ১৫টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। আরও প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে আসছেন। এতে করে প্রত্যেক আসনেই দুইয়ের অধিক প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা হওয়ার বিষয়টিই সামনে আসছে।
নির্বাচন ঘিরে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে,শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের ঘোষণার মধ্যে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বাধা দেওয়া হবে না-এমন ইঙ্গিত আসার পর জেলায় জেলায় নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এদের মধ্যে মনোনয়ন না পাওয়া বর্তমান সংসদ সদস্য যেমন আছেন,তেমনি আছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও’এর ব্যতিক্রম নয় নেত্রকোণা জেলাতেও।
আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে রোববার ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে বিক্রি হওয়া মনোনয়নপত্রের তালিকায় দেখা গেছে: নেত্রকোণা-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমা তালুকদার ও আতাউর রহমান খান স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।তাদের মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমা তালুকদার সাবেক সংসদ সদস্য জালাল উদ্দিন তালুকদারের মেয়ে ও সাবেক দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।আর আতাউর রহমান খান ২০১৮ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি।নেত্রকোণা-১ আসনে এ বছর দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমেদ রুহী। বাদ পড়েছেন মানু মজুমদার।
নেত্রকোণা-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আশরাফ আলী খান খসরুকে এবারও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ আসনে সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামছুর রহমান (ভিপি লিটন) ও জাকের পার্টির মানিক চন্দ্র সরকারও স্বতন্ত্র মনোনয়নপপত্র সংগ্রহ করেছেন।
নেত্রকোণা-৩ (আটপাড়া-কেন্দুয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলকে আবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ আসনে মনোনয়ন কিনেছেন সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুর কাদের কোরাইশী,ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আসাদুজ্জামান খান,আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক আব্দুল মতিন।
নেত্রকোণা-৪ (মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুড়ি) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাজ্জাদুল হাসানকে। এ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন গত ১১ জুলাই মারা যান। এরপর উপনির্বাচনে সাজ্জাদুল হাসানকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা শফি আহমেদ।জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি নব্বইয়ের গণঅভ্যূত্থানে শীর্ষ নেতা ছিলেন।
নেত্রকোণা-৫ (পূর্বধলা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন। এ আসনে মনোনয়ন না পাওয়া অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, তুহিন আহমেদ খান, মো. মিছবাহুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন কর্নেল আবু তাহের ও বর্তমান সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের (বীর প্রতীক) ছোট ভাই। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য। তুহিন আহমেদ আওয়ামী লীগের লন্ডন শাখার নেতা এবং নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।আর মো. মিছবাহুজ্জামানও স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির একজন প্রভাবশালী নেতা। আসনটিতে জাতীয় পার্টির ওয়াহিদুজ্জামান আজাদও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
Leave a Reply