নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আবুল কালামসহ অফিসের তিনজন আহত হয়েছেন।
রোববার (২৫ জুন) সকাল ১০টার দিকে মোহনগঞ্জ পৌরশহরের নওহাল এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন—মোহনগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আবুল কালাম (৫৫), পিয়ন শরীফুল ইসলাম (২৬) ও গাড়ি চালক আব্দুল্লাহ হোসেন খান (৩০)। আহতদের মধ্যে ডিজিএম আবুল কালাম ও পিয়ন শরীফুল ইসলামকে উদ্ধার করে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। চালক স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
অভিযুক্ত জহিরুল ইসলাম রিপন মোহনগঞ্জ শহরের নওহাল গ্রামের (স্টেশনের পশ্চিমপাশে) মো. ইসমাইলের ছেলে। তিনি ঠিকাদারি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জহিরুল ইসলাম রিপনের নেতৃত্বে রকি ও রন্টিসহ ২০-২৫ জনের একটি দল লোহার রড ও লাঠিসোটা নিয়ে পল্লী বিদ্যুত অফিসে হামলা চালায়। নিচের তলায় ভাঙচুর শেষে দ্বিতীয় তলায় ডিজিএম আবুল কালামের কক্ষে গিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। তাকে বাঁচাতে গেলে পিয়ন শরীফুলকেও পিটিয়ে আহত করেন তারা। পরে চালকসহ আরও কয়েকজনকে মারধর করেন। এ সময় হামলাকারীরা অফিসের কাঁচ ও চেয়ার ভাঙচুর করে। হামলায় ডিজিএম আবুল কালাম ও পিয়ন শরীফুল আহত হয়। পরে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের মিটার টেস্টিং সুপারভাইজার শাহজাহান বলেন, রিপন দেড় বছর ধরে তার বাসার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন না। সে কারণে গত সপ্তাহে আমাদের নেত্রকোনা অফিসের টিম এসে তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এ ঘটনায় তিনি ডিজিএমের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন। এছাড়া তার পাশের বাসার এক লোক বাসায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছিল। সেই লাইন বিচ্ছিন্ন করার পর জরিমানা করা হয়। রিপন তার প্রতিবেশীকে জরিমানা না করার জন্যও তদবির করেছিলেন। কিন্তু তার তদবির না শোনার কারণেও ক্ষিপ্ত ছিল। তাই রোববার সকালে রিপন তার নিজের বাসার লাইনে লুজ কানেকশন হয়েছে বলে জানায়। অফিস থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ফোনে লোকজন ডেকে মুহূর্তেই হামলা চালায়।
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পিসিএম (স্টাফ) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, হামলার উদ্দেশ্যে আগে থেকেই লোকজন নিয়ে এসেছিলেন রিপন। তার বাসায় লুজ কানেকশনের বিষয়টি বাহানা মাত্র। নাহলে দুই-তিন মিনিটের মধ্যে এত লোকজন জড়ো করার কথা নয়।
এ বিষয়ে ডিজিএম আবুল কালাম বলেন, রিপন তার বাসার কাছে বিদ্যুতের লাইনে সমস্যা বলে জানায়। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অফিসের লোকজনকে বলি। কিন্তু তারপরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমার অফিসে হামলা চালায়। অফিসের কাঁচ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। আমাকে রড দিয়ে আঘাত করে। তাদের ফেরাতে আসা পিয়ন শরীফুলসহ কয়েকজনকে আহত করেছে।
অভিযুক্ত রিপন মিয়া জানায়, টেংগাপাড়া স্কুলের পাশে মেইন লাইনের একটি তার ছিঁড়ে ঝুলে রয়েছে। যেকোন সময় মানুষের ওপর পড়ে যেতে পারে। তাই অফিসে গিয়ে ডিজিএমকে জানাই তারটি ঠিক করার জন্য। কিন্তু তিনি আমাকে এই টেবিল থেকে সেই টেবিলে ঘুরিয়েছেন অনেকবার। বিষয়টি বাইরে গিয়ে বলার পর স্থানীয় পোলাপান ক্ষিপ্ত হয়ে অফিসে গিয়েছে। তবে ভাঙচুর ও মারধরে ঘটনা পুরোটাই বানোয়াট। নিজেদের অফিস তারা নিজেরাই ভেঙেছে।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রকৌশলী বিপ্লব সরকার বলেন: এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় ডিজিএম আবুল কালাম বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম বলতে চাননি ওসি। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
Leave a Reply