শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন

নেত্রকোনায় শুরু হয়েছে মাছ ধরার বাইর বিক্রির ধুম

অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট : বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩
  • ৯৫ পঠিত

জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে দেশি প্রজাতির ছোট মাছ ধরার উপকরণ বাঁশের তৈরি বাইর মাছ ধরার ফাঁদ বিক্রির ধুম পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে এখন টই-টুম্বুর ফসলের জমি থেকে শুরু করে খাল-বিল ও নদী ।

এতে দেশি প্রজাতির ছোটজাতের মাছের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাই বিভিন্ন উপায়ে মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জানা গেছে, জেলার হাটবাজারগুলোতে শত শত বাইর বিক্রি হচ্ছে,এখানকার তৈরি বাইর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গুণগত মান ভালো হওয়ায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন বাইর শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।

বাঁশের শলার তৈরি বিশেষ ধরনের মাছ ধরার ফাঁদের নাম দারকি। অঞ্চলভেদে এর অন্য নামও আছে। কোথাও একে বলে ঘুনি। আবার কোথাও বলে বাইর, দিয়াইব অথবা আনতা। বর্ষা মৌসুমে নদী-নালা,খাল-বিলে মাছ ধরতে কম পানিতে দারকি পাতা হয়। মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে এটির ব্যবহার চলে আসছে আবহমান কাল ধরে। গ্রাম বাংলায় সর্বত্র দারকি দিয়ে মাছ ধরার প্রচলন এখনও দেখা যায়।

খলিশা, টাকি, পুঁটি, শিং ও কৈসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা হয় দারকি দিয়ে। বাঁশের শলার তৈরি এটির উভয় দিকে উপরে-নিচে ৩টি করে ৬টি দ্বার (পথ) থাকে মাছ ঢোকার। দ্বারগুলো এমন ফাঁদবিশিষ্ট যে মাছ একবার ওই দ্বার দিয়ে ঢুকলে আর বের হয়ে আসতে পারে না। দারকির ভেতরকার ঘেরাটোপে মাছ আটকা পড়ে যায়। মাছ ধরার এ যন্ত্রটি গ্রামে প্রায় সবার ঘরেই পাওয়া যায়। ব্যাপক হারে চান্দিনার ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে স্থান করে নিয়েছে।

নিম্ন আয়ের অনেক পরিবার বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে বাইর তৈরিকে বেছে নিয়েছেন। বাঁশ ও সুতা দিয়ে তৈরি এসব বাইর ভালো মানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মাছ শিকারিরাও এসব হাটবাজার থেকে কিনে নিয়ে যান। বর্ষা মৌসুম এলেই বাইরের কদর বেশি হওয়ায় বাইর তৈরির সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো মৌসুমের দুই-তিন মাসেই প্রায় সারা বছরের আয় করে নেন।

বাইর তৈরির কারিগররা জানান : এসব বাইর তৈরিতে প্রকারভেদে খরচ পড়ে ৮০ থেকে ২০০ টাকা। বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আকারে বড় বাইর তৈরিতে খরচ অনুযায়ী বিক্রির মূল্য নিধারণ করা হয়। বাইর,বিভিন্ন এলাকায় ধন্দি, বানা, খাদন, খালই, বিত্তি, বুড়ং ও ভাইর নামে পরিচিত। ছোট প্রজাতির মাছ ধরার সুতি, কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন উপকরণের দাপটের কারণে বাঁশের তৈরি বাইর বাজারে বেশ প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। এ জেলার প্রায় দশটি এলাকার কয়েক শতাধিক মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করলেও এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।

কলমাকান্দা উপজেলার সদর ইউপির বাসিন্দা আবু হানিফ বলেন, আগের মতো আর বাঁশ পাওয়া যায় না, বাঁশের দামও অনেক। তাই লাভ খুব বেশি না হলেও বর্ষা মৌসুমে এর চাহিদা থাকায় রাত-দিন পরিশ্রমের মাধ্যমে বাইর তৈরি করে তারা বেজায় খুশি।

এতে একদিকে যেমন সময় কাটে, অন্যদিকে লাভের আশায় বাড়ির সদস্যরা মিলে বাইর তৈরি করে অভাব ঘুচানোর চেষ্টা করেন। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ঝর্ণা ও সেতু জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের পরিবারকে সহায়তা করার জন্য তারাও বাইর গাঁথে। এতে করে তাদের পড়ালেখার খরচের সমস্যা হয় না।

খালিয়াজুরী উপজেলার গাজীপুর এলাকার সাজু মিয়া বলেন, ২-৩ বছর আগে তিনি নিজেই বাইর তৈরি করতেন। এখন তিনি বাইর তৈরির এলাকা ঘুরে ঘুরে বাইর পাইকারি কিনে আনেন। পরে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে হাটবারের দিনগুলোতে তা খুচরা বিক্রি করেন। এগুলো বিক্রির লাভ্যাংশ দিয়ে তার সংসার চলে। বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি বাড়ায় বর্তমানে চাহিদা অনেক বেশি। এ কারণে দামও বেশি। এতে তার লাভও বেশি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

লেপসিয়া বাজারের ইজারাদার পক্ষের রাজস্ব (জমা) উত্তোলনকারী বলেন : বর্তমানে এই হাটে সপ্তাহের এক দিনে প্রায় ২ লাখ টাকার মাছ ধরার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। এ উপজেলার মানুষ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ এ হাটে এসব সামগ্রী কিনতে আসেন।

লেপসিয়া গ্রামের গৌরাঙ্গ জানান : সবাই বংশ পরম্পরায় জীবিকা নির্বাহ করতে দারকি বানিয়ে আসছেন। বছরের ৭ মাস সেটি বানান। মহিলারা বেকার সময় বসে না থেকে এর শলা কেটে জমিয়ে রাখেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 Daily Netrakona News