কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বর্ষা মৌসুমের আগেই ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ এ বছরে প্রায় আড়াই শতাধিক ঘড়বাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকারিআরো তিন শতাধিক বাড়িঘর ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। তবে ভাঙনরোধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্টরা।
এমন চিত্র উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের চরবড়ভিটা ও নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরাদিয়ার খাতার। চরটিতে চিলমারী, থানাহাট, নয়ারহাট ও রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস।
ইতোমধ্যে নদী ভাঙনের মুখে স্থানীয় একটি মসজিদ ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। এসময় তারা বলেন, নদী ভাঙতে ভাঙতে মসজিদের কাছে এসেছে। এখন মসজিদটি ভেঙে ফেলতে বাধ্য হচ্ছি। নদী যখন দুরে ছিল তখন জিও ব্যাগ ফেললে হয়তো ভাঙন কমে যেতো তাতে মসজিদটি রক্ষা পেত।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নয়ারহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহফুজার রহমান বলেন, বজরাদিয়ার খাতা ও চর বড়ভিটায় ভাঙনে এ বছরে ২‘শ ৫০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। স্কুল, মসজিদসহ শেষ একমাসে আবারও শতাধিক বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। এই সময়ে জিও ব্যাগ ফেলানো না গেলে এই চর রক্ষা করা যাবে না।
এদিকে গেলো ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি চর বড়ভিটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল বলেন, গেলো বন্যায় আমাদের স্কুলটি ভেঙে গেছে। পরে আমরা স্থানান্তরিত করে একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় নেই। কিন্তু নদীর যে পরিমাণ ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা খুব চিন্তিত স্কুলটি কোথায় নিয়ে যাবো। কি করব। দ্রুত ভাঙন রোধ হলে স্কুলটি হুমকির মুখে পড়বে না।
ভাঙনের স্বীকার স্থানীয় যুব ক্লাবের সভাপতি এস এম রানু সরকার বলেন, নদী ভাঙনের কারণে আমাদের ক্লাব ঘর রক্ষা করতে পারিনি। কিন্তু এত ভাঙনের পরও জনপ্রতিনিধিরা ও সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি। এখন যদি ভাঙন থামানো না যায় তাহলে গোটা চর ভেঙে যাবে।
রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুর রহিম জাহাঙ্গির বলেন,এই বছরেই এক শতাধিক বাড়িঘর নদীতে ভেঙে গেছে। আমার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের তো আর লোক নাই ওখানে বলা যায়। ওখানে নয়ারহাটের কিছু মানুষ আছেন। তারাও ভাঙনের স্বীকার। এর আগে মন্ত্রী , ইউএনও স্যারকে জানানো হয়েছে। এরপরও কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে এতে চর না থাকার কথা।
নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেহারে ভাঙন শুরু হয়েছে এতে ২৫০ থেকে তিন শতাধিক পরিবার ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। ভাঙনের স্বীকার হয়ে অনেকেই এখন স্থানান্তরিত হয়ে কাজল ডাঙার চরে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও কোনো ভূমিকা নেই। তারা আছে বন্যা হলে এসে ব্যাগ ফেলবেন নদীতে।
তারাই আর কি করবেন, বরাদ্দ অল্প। আমার ইউনিয়নের বর্তমানে উত্তর খাউরিয়া, খেরুয়ারচর ও দক্ষিণ খাউরিয়ার চর ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। সামনে পানি বাড়তে থাকলে এসব এলাকায় ভাঙন শুরু হবে। আর বজরা দিয়ারখাতায় তো ব্যাপক হারে ভাঙন চলছে। একটি প্রাথমিক স্কুল ছিলো সেটিও ভেঙে গেছে। বর্তমানে যেখানে স্থানান্তরিত করেছে স্কুলটি। এখন ভাঙন না থামলে ওই জায়গাটিও নদীগর্ভে চলে যাবে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুর রহমান জানান,ভাঙন রোধে যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন: এই মুহুর্তে চরাঞ্চলে ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে কাজ করতে গেলে সমীক্ষা করে করতে হবে। ভাঙন রোধে এখন জিও ব্যাগ ফেলানো যাবে,তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ নিতে হবে।
Leave a Reply