শিশুরা সুন্দর শিশুরা নিষ্পাপ প্রতিটি শিশুই ফুলের মতো ফুটবার এবং সুন্দর রূপে বিকশিত হবার দাবি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। যে সময়ে শিশুদের বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা। সেই সময়ে নেত্রকোনার বহু শিশুরা শিশুশ্রমে জড়িয়ে পরেছে।
দারিদ্র্যতার কারণসহ অসচেতনতার জন্য দিন দিন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। খাতা কলমে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থাকলেও শিশু শ্রম বন্ধে এদের নেই কোনো জবাবদিহিতা ও কার্যক্রম।শিশুরাই দেশ ও জাতির কর্ণধার। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এজন্য শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা অত্যান্ত আবশ্যক। পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলোতে শিশুদের শারীরিক মানসিক ও মেধার বিকাশের জন্য নানা ধরনের পরিচর্যা ব্যবস্হা গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে শিশুর অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের কারণে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে নানা ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন নেত্রকোনার সচেতন মহল।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার ৮৬টি ইউনিয়ন সহ ৫টি পৌর শহরে দারিদ্র্যতার কারণসহ অসচেতনতার জন্য দিন দিন বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। জেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্ন আয়ের শিশুরা দুমুঠো অন্নের জন্য ঝূঁকিপূর্ণ শিশু শ্রমে জড়িয়ে পরেছে।এসব শিশু শ্রমিকের কেউ কেউ পিতৃহীন বা এতিম। কেউবা অভাবের কারণে ঘর ছেড়ে ঝূঁকিপূর্ণ কাজে পা বাড়াচ্ছে।
জেলার সকল উপজেলার হাট বাজারের চায়ের দোকানে হোটেল রেস্তোরাঁয়,বেকারী, ওয়েল্ডিং কারখানা, অনেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপে, বাসের হেলপার, বিল্ডিং নির্মাণের রাজমিস্ত্রীর যোগান, রিকশা ভ্যান চালানো, তামাকের গোডাউনে,আগলামন, নসিমন, করিমন, আবার অনেকেই রিক্সা ভ্যান চালায়, অনেকেই জুতা পালিশ করে, অনেকেই শুটকির কাজে শিশুশ্রম দিচ্ছে। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলেও তারা ন্যার্য মুজুরী পায় না।শুটকির কাজ করে একদিকে শিশুরা যেমন রোগব্যাধিতে ভুগছে অপরদিকে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের কারনে তারা অকালে ঝরে পড়ছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় অনেক শিশু নিয়োজিত।
আবার অনেকেই মোটর গ্যারেজে কাজ করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে জীবন সংগ্রামে নেমেছে। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী জন্ম থেকে শুরু করে ১৮ বছর পর্যন্ত ছেলে মেয়েদের শিশু হিসেবে ধরলেও সংশ্লিষ্ট শ্রম অধিদপ্তর ১৪ বছরের সকল বয়সের ছেলে মেয়েদের শিশু হিসেবে ঘোষণা করেছে। এদের কোনো কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নেত্রকোনায় কম বয়সের এসব শিশুরা শিশুশ্রমে জড়িয়ে পরেছে।যাদের এসময়ে লেখাপড়া করার কথা।
খেলা ধুলা আনন্দফুর্তি করার কথা সেই বয়সে তাদেরকে নামতে হচ্ছে কঠিন জীবন সংগ্রামে। নেত্রকোনায় কোনো শ্রম অধিদপ্তরের অফিস নেই। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এই কথাটা বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ। তার বাহিরে শিশু শ্রম নিয়ে কার্যকারী কোনো পদক্ষেপ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানেন না জেলার শিশু শ্রমিকের কোনো পরিসংখ্যান। শিশু শ্রমের কথা কর্মকর্তারা শিকার করলেও শিশুদের উন্নয়নে কোনো কার্যক্রম নেই।যার কারণে এই বিষয়ে জেলা শিশুশ্রম বিভাগের কর্মকর্তারা মুখ খুলতে রাজি হননি। তাঁরা এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয়নি।
শিশু শ্রমের কারণে নেত্রকোনার অকালে ঝরে পড়ছে হাজারো শিশু। এই শিশু শ্রম বন্ধ না হলে এ জেলায় অশিক্ষিতের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সুশীল সমাজ। তাই শিশুশ্রম বন্ধকল্পে এ জেলাকে সয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেন। নেত্রকোনায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও কতৃপক্ষের কোনো নজর নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগটি শুরু মাত্র নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছে।এ বিভাগের কোনো কার্যক্রম নেত্রকোনায় না থাকায় জেলার সুশীল সমাজকে আরও ভাবিয়ে তুলেছে। জেলার সুশীল সমাজের দাবি অবিলম্বে শিশু শ্রম বন্ধ করতে হবে।
নেত্রকোনা আঞ্চলিক কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, শিশু শ্রম নিরসন বা পুনর্বাসনের জন্য ইতিমধ্যে সরকার কাজ করছে। এক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থাকে, আমাদের নেত্রকোনায় শিশু শ্রমের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের ও সরকারি ভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply