শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:২০ পূর্বাহ্ন

বিভিন্ন মানবিক কাজের জন্য প্রশংসিত পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স

দৈনিক নেত্র নিউজ ডেক্স :
  • আপডেট : শনিবার, ২০ মে, ২০২৩
  • ৪৮৮ পঠিত

সরকারি আমলাদের জন্য প্রতিবেদন তৈরি করা কারও চোখে বেমানান মনে হলেও প্রকৃত অর্থে কাজের ধারাবাহিক গতি যখন অস্বাভাবিকভাবে ভালো হয়, তখনতো দুই-চার কলম লেখা যেতেই পারে। কথা বলছিলাম, প্রজাতন্ত্রের এক কর্মকর্তার ব্যাপারে। তিনি আর কেউ নন, তিনি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স। তিনি পূর্বধলায় যোগদানের পর থেকেই তাঁর মনের প্রতিভা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে (৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২) এ যোগদান করার পর থেকেই এরই মধ্যে জয় করে নিয়েছেন পূর্বধলা উপজেলাবাসীর হৃদয়।

তিনি তাঁর চাকুরি জীবনে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর পদোন্নতি পান এসিল্যান্ড হিসেবে। এসিল্যান্ডের পর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কর্মরত ছিলেন, দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ভবন, রাস্তা-ঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ধরতে।

সেখান থেকেই পূর্বধলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার পদে যোগদান করেন। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। কি শীত, কি গরম, আর কি বর্ষা।

মাঠ-ঘাট সব চষে বেড়িয়েছেন তাঁর কর্মযজ্ঞ দিয়ে। কনকনে শীতের মাঝেই কম্বল নিয়ে দাঁড়িয়েছেন অসহায়ের পাশে। গভীর রাতে কোনও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহনীর পাশাপাশি সমানতালে ঘটনার স্থানে থেকে আগুন নিভানোর শেষ পর্যন্ত থেকেছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তদের। কাক ডাকা ভোরে আর গভীর রাতই কি সর্বদা ছুটে বেড়ান পূর্বধলা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে। সবই যেন তাঁর নখদর্পনে। ক্লান্তিবোধ হয়তো তাড়াও করেনা তাঁকে।

বৈশ্বিক এই মহামারী কালেও তিনি বসে ছিলেন না। ত্রাণ হাতে ছুটছেন তাঁর সারা কর্মস্থলে। শুধু তাই নয়, করোনা মহামারি কালেও নিজ জীবনের পরোয়া না করে করোনা আক্রান্তদের পাশে থেকেছেন। যেখানে অনেক সরকারি কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দিনের পর দিন।

মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে ছুটে গেছেন দিকবিদিক। এই কর্মকর্তার ঘরে আছে এক অবুঝ কন্যা সন্তান অথচ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁর। নিজের কিছু হলে যে ছোট্ট শিশুটি অথবা সহধর্মিনীর কিছু হয়ে যেতে পারে তিনি হয়তো তা মনেই করেন নি।

করোনা মোকাবিলায় তাঁর কথা করোনাকে জয় করবোই। মানবিক এই কর্মকর্তার আচরণ যেমন মানবিক, তার বিচার প্রক্রিয়া তেমনই কঠিন। করোনা কালে অনেককেই অর্থদণ্ড গুণতে হয়েছে সরকারি আদেশ নির্দেশ না মানার কারনে। ইভটিজার, পারিবারিক জটিলতা কিংবা বাল্যবিবাহে কোন ছাড় নেই তাঁর।

যেখানে অনেক জনপ্রতিনিধি নীরব কিংবা অসফল সেখানেই ইউএনও শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স সফলতার গল্প রচিত। আর হবেই না কেন। তিনি যে একজন সম্মুখযোদ্ধা। পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারের মেধাবী সন্তান।

তাঁর সম্বন্ধে বলতে গিয়ে নেত্রকোনার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স একজন করিৎকর্মা সৃজনশীল কর্মকর্তা।

৩৪ তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা গত ২০২২ সালের ৩ই ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। তিনি জানান, মানুষ তার কর্মের মাধ্যমেই স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, এ উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যতদিনই দায়িত্ব পালন করেছেন বা করবেন তিনি চান তাঁর কর্মগুলো বেঁচে থাকুক আজীবন।

উপজেলার অভ্যন্তরীণ রাস্তাসমূহ পাকাকরণ, সমাজ সংস্কার, চুরি ছিনতাই বন্ধে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সবকয়টি স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, উপজেলা পরিষদের পুকুরের চারপাশে চলার পথ ও দৃষ্টিনন্দন কাজ, বসার জায়গা নির্মাণ এবং নয়নাভিরাম রঙিন বাতি স্থাপন করে পুরো আলোকিত করেছেন পুরো ক্যাম্পাসকে। শরীর চর্চায় প্রাতঃভ্রমণ, বিনোদন ও অবকাশের জন্য এটিকে একটি আধুনিক ক্যাম্পাসে পরিণত করেছেন।

একজন শিক্ষাবান্ধব ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন করেন। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীর গুণগত এবং লেখাপড়ার জন্য মানসম্মত বিদ্যাপীঠ গড়ে তোলার নানা কার্যক্রম শুরু করেছেন ইতোমধ্যে। কখনো কলেজ, মাদ্রাসা,বিদ্যালয়ে ইউএনওর ঝটিকা অভিযানের ফলে নিয়মমাফিক চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাকার্যক্রম।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, প্রশাসন মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, শিক্ষার্থীসহ অসহায় মানুষের বিপদে আপদে মানুষের পাশে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক।

তিনি দক্ষতা ও সুনামের সাথে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুযোগ পেলেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। খবরের কাগজ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অসহায় মানুষের খবর আসলে ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তাঁদের বাড়ি থেকে ডেকে এনেছেন তার কার্যালয়ে এবং সমাধানও করেছেন সাথে সাথেই।

প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি অনেক সময় ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং নিজের অর্থে অনেকের পাশে থেকেছেন। অনেক শিক্ষার্থীকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে লেখাপড়া করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন তিনি। এসব কল্যাণকর কাজের জন্য সংবাদ পত্রের শিরোনাম ও হয়েছেন বহুবার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পূর্বধলা উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের এক শিশু বিরল এক রোগে আক্রান্তের কারণে সেই শিশুকে দীর্ঘদিনের শিকলবন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করেন।

তিনি গত ১৪ মাসে প্রায় ৩৫ টির মতো বাল্য বিয়ে বন্ধ করলেন, মাদক ছেড়ে খেলার মাঠে ৫ শতাধিক যুবক, কোটি টাকার সরকারি জায়গা উদ্ধার, করোনা কালে কৃষকের জন্য কৃষি শ্রমিক প্রস্তুত রেখেছিলেন ইউএনও, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে বিভিন্ন স্কুলে ক্লাস নেন ইউএনও, বাল্য বিয়ে বন্ধ করলো ইউএনও, অসহায় নারীদের বিনা খরচায় নারী সহায়তা সেল, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের জন্য নির্মাণ করা বীর নিবাসের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ এবং দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা বৃত্তি ও বাইসাইকেল বিতরণ, আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীগণকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান, বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করেছেন জমকালো ভাবে। করেছেন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সংস্কার, যেটি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল।

তিনি পূর্বধলা উপজেলায় যোগদানের পূর্বে ১৭৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাত্র ২১ টিতে শহিদ মিনার ছিল। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং প্রবল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে আজ পূর্বধলার সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মিত হয়েছে শহিদ মিনার। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এ বছর পূর্বধলা উপজেলাকে করেছেন ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত।

ইউএনও শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, ছাত্রজীবন থেকে মানব সেবার প্রতি দুর্বল ছিলাম। ৩৪ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করি। সারা জীবন মানব সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 Daily Netrakona News